।।যুবরাজ শাহাদাত।।
ভিসা – ভ্রমণের একটু গুরুত্বপূর্ণ অংশ. আপনি যেকোনো দেশের ভ্রমণের ক্ষেত্রে যে শর্ত প্রথমে মানতে হবে সেটা হল আপনাকে ওই দেশের ভিসা সংগ্রহ করতে হবে. আমাদের বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য মাত্র ৩৮ টি দেশের বর্ডার খোলা আছে ভিসা ছাড়া বা ভিসা অন আরাইভাল সুবিধা নেয়ার দিক থেকে। কোন দেশকে কতটি দেশে ভিসা ফ্রি প্রবেশের অনুমতি দিবে সেটা নির্ভর করে ওই দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উপর, জিডিপির উপর, দেশের পাসপোর্টের রাঙ্কিং এর উপর. এখন বাংলাদেশ একদম রাঙ্কিংয়ের ক্ষেত্রে তোলার দেশ গুলোর মধ্যে পরে ফলে আমাদের ভিসা নেয়ার দেশের সংখ্যা অনেক বেশি। বিশ্বের ৩৮ টি দেশ বাদে আমাদেরকে যেকোনো দেশে প্রবেশের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক ভিসা নিতে হবে. এখন কথা হলো ভিসা পাওয়া কি আমাদের জন্য খুব সহজ বিষয় ?
উত্তর – না . বাংলাদেশীদের ভিসার অনুপাত হিসাব করলে খুব কম পরিমানে ভিসা পেয়ে থাকে, দূতাবাস দিয়ে থাকে। বাংলাদেশি বা এশিয়ানদের ভিসা না দেয়ার কতিপয় কারণ আছে তার মধ্যে আজকে সংক্ষেপে কয়েকটি কারণ তুলে ধরব. অনেকের প্রশ্ন ভাই বাংলাদেশিদের ইউরোপের জব ভিসা দেয় না কিন্তু ইন্ডিয়ান, নেপালি শ্রীলঙ্কান নাগরিকদের দেখলাম ধূমছে এমবাসি ভিসা দিতে . এর আসলে কারণ কি ? আসুন কারণ গুলো জানি :
বাংলাদেশ কে ইউরোপের কাছে আসলে তেমন ভাবে পরিচয় করানো ই হয় নি বলা চলে, বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে এখনো ইউরোপে আমেরিকান দেশগুলোতে গেলে প্রথমে ইন্ডিয়ান বলে ই তারা ধরে নেয় , পাসপোর্ট তা হাতে নেয়া ছাড়া তাদের কনফার্ম হবার উপায় নেই আমরা আসলে ভারতীয় না বাংলাদেশী > যত বড় এম্বাসি আছে বাংলাদেশে তাদের সবাই বাংলাদেশী বা বাংলাদেশ সম্পর্কে ধারণা রাখে কম বেশি . কিন্তু বর্তমান সময়ে কানাডা থেকে শুরু করে ইউকে সকল দেশের এম্বাসি কার্যক্রম বাংলাদেশী দের জন্য বাংলাদেশের বাহিরে যেয়ে করতে হয় . আর ইউরোপের যে সকল দেশের কনস্যুলেট নেই বা এম্বাসি নেই তাদের জন্য বাধ্যতামূলক ইন্ডিয়া যাওয়া ছাড়া আমাদের উপায় নেই . আর সেই সুবাদে ভোগান্তির অন্ত নেই বাংলাদেশীদের . তারপরও ভিসা নেয়া বা আবেদন করা থেকে নেই বাঙালিদের। ভিসা ইস্যু আর রিফিউজড এর পরিসংখ্যান দেখলে বুঝা যায় বাংলাদেশীদের ভিসা পাবার হার ২০-৩০% এর উপরে যায় না বছরে অর্থাৎ প্রতি ১০০ জন্যে ২০-৩০ জনের ভিসা হয়. আবার কোনো কোনো দেশের ক্ষেত্রে ৯০-৯৫ ভাগ ই রিফিউজড যেমন হাঙ্গেরি , লিথুয়ানিয়া লাটভিয়া ইত্যাদি . আসুন কারণ গুলো একটু চোখ ভুলাই –
প্রথম কারণ – ভুয়া/জাল ডকুমেন্টস সরবরাহ করা এম্বাসিতে।।
বাংলাদেশীদের বেশ একটা অংশ বাহিরে আসার ক্ষেত্রে বিভিন্ন এজেন্সির হেল্প নিয়ে থাকেন, অনেকে নিজে নিজে আবেদন করেন। তবে এজেন্সির লোক সবাই যে জেনুইন কাজ করে তা না কিন্তু . অনেকে ছাত্রছাত্রীদের ফাইল আর কিছু টাকা অগ্রিম নিয়ে তাদের ফাইলের কাজ হচ্ছে হবে ছাত্রদের সব রেডি করতে থাকে . সিভি থেকে শুরু করে একটা ছাত্রের রিকমেন্ডেশন লেটার তারা তৈরি করে দেন, এমনকি অনেক এজেন্সি আছে যারা ব্যাংক স্টেটেমেন্টস দিয়ে ছাত্রদের হেল্প করবে বলে সাহায্য করে. আসলে একজন ছাত্রের নামে account ই নেই তারা কিভাবে জেনুইন ব্যাংক স্তস্টেমেন্টস দেখাবে ? তারা মেইনলি সব ডকুমেন্টস বিভিন্ন জেনুইন ব্যাংক স্টেটেমেন্টের কপি ইউজ করে নাম ট্রান্সজেকশন ব্যাবহার করে এম্বাসির কাজে ইউজ করেন . এম্বাসীযে কাজ গুলো কে যদি আপনি আমি বুক ভাবে যে তারা এইসব টেকনিক ধতে পারবে না তাহলে আপনি বোকার স্বর্গে বসবাস করছেন। তাদের একটা মিশনে সেট করার ওয়েল ট্রেইন করিয়ে এম্বাসী কনস্যুলেটে বসানো হয়. আপনি রিফিউজি হবার পর জানলেন সাসপিসিয়াস মনে হইসে আপনার ডকুমেন্টস তাই আপনাকে রিফিউজ করেছে. আর অনেকে সার্টিফিকেটে ডুপ্লিকেট কিনে ওই নামে এম্বাসি ফেস করতে যান ফলাফল জিরো , ধরা পড়লে ৫ বছরের মিনিমাম ব্যান খাবেন সেটা নিশ্চিত . সো আমাদের কে ভুয়া জাল ডকুমেন্টস সরবরাহ করা থেকে বিরত থাকতে হবে. এমনকি ইউরোপের কিছু দেশে বাংলাদেশের ডকুমেন্টস সরকারি কোন দপ্তরে এখন আর গ্রহণ করে না . যেমন সুইডেনের কথা ই বলি তারা বাংলাদেশের বার্থ সার্টিফিকেটে , মেরিজ সার্টিফিকেটে গ্রহণ করতে রাজি না . এমন কি নরওয়েও পাকিস্তান, বাংলাদেশ, নাইজেরিয়া এই ৩ দেশের ডকুমেন্টস অথেন্টিকেশনে ব্যাপক জালিয়াতি হয় বলে ২০১৩-২০১৪ সালে নোটিশ জারি করেছি ওই সকল দেশের ডকুমেন্টস তারা গ্রহণ করবেন না যেগুলো বাগলাদেশ থেকে নোটারি করে সেন্ড করা হয় . সো ভুয়া জাল কিছু দেয়ার আগে চিন্তা করবেন , এজেন্সি হয় ভিসা করলে টাকা পাবার আশায় জাল ডকুমেন্টস add করে দিবে কিন্তু রিসকে পড়বেন আপনি . ধরা খেলে ব্যান তা এজেন্সি খাবে না আপনি খাবেন . মাথায় রাখবেন বেপার গুলো .
২য় কারণ – ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা না থাকার কারণ !
অনেকেই মনে করে সার্টিফিকেটে হলে ই বুঝি বিদেশ আসা যাবে , না ধারণা একবারে ভুল . ছোটবেলা থেকে উনিভার্সিটি লেভেল সব জায়গায় টুকটাক ইংরেজির সাথে আমরা পরিচিত অথচ বাহিরের দেশে পড়তে বা জব করতে আসার বেপারে যখন এম্বাসিতে ইন্টার্ভিউ দিতে যায় তখন কারো কারো অবস্থা একেবারে নাজেহল হয়ে যায় . নিজের নাম জিজ্ঞেস করলে বাংলাদেশ বলে দেয়া কিংবা why you will go there ? এমন সব প্রশ্নের উত্তরে নিজের নাম বলে দেয়া লোকদের কি করে ভিসা অফিসার ভিসা দিবে তাদের দেশের পড়তে বা জব করতে যাবে ? যেহেতু ইউরোপের নিজস্ব ভাষা ছাড়াও ইংরেজিতে সব কাজ চালাতে হবে /হবে তাহলে আমাদের মাথায় এটা রাখতে হবে অব্যশই আমাদের ইংরেজির বেপারে দক্ষতা থাকতে হবে . আপনার সার্টিফিকেটে এর পাশাপাশি, ভালো রেজাল্টের পাশাপাশি ইংরেজির দক্ষতাও একটা অন্যতম জিনিষ হলো ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে . এটা নিয়ে অবহেলা না করে দেশে ব্যাচেলর ইন্টার পড়া অবস্থায় আইইএলটিএস এর বেপারে প্রস্তুতি নেন. ভালো স্কোর আপনাকে ভিসা পেতে সহায়তা করবে .তেমনি জবের ক্ষেত্রেও কাজে দিবে .
৩য় কারণ – ইউরোপে কোনো দেশে স্টুডেন্ট/জব ভিসায় এসে অন্য দেশে পালিয়ে যাওয়া !
বাংলায় একটা প্রবাদ আছে নিজের দোষে কপাল পুড়া . আসলে বাংলাদেশের মানুষ জনের মধ্যে এটা হলো খুব বাজে একটা স্বভাব। একবার নিজের পর বলতে পারলেই হলো বাকি জাহান্নামে যাক . ইউরোপে এসে যে দেশের এসেছেন আপনাকে মাথায় রাখতে হবে ভিসা আবেদন করার আগে যে দেশে যাচ্ছেন আসলে ওই দেশের ফিউচার কি আধু ওই দেশে টিকতে পারবো কি না , সেটেল হতে পারবো কি না বা আমাকে যে শর্তে ভিসা দেয়া হচ্ছে আমি কি সেটা মানতে বাধ্য কি না ? যেমন ধরেন ইতালি যে আপনাকে সিজনাল ৩-৬ মাসের ভিসায় আনা হলো . নিয়ম হলো আপনাকে সিজনাল জন ভিসায় এসে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ নেয়া যাবে না অর্থাৎ আপনাকে ৬ মাস পর দেশে ফিরতে হবে কিন্তু আপনি করলেন কি আসার পর না সিজনাল ভিসা যেখানে আনা হইছে ঐখানে গেছে না যারা গেছে তারা ৬ মাস শেষে দেশে ফিরেছেন . অতএব আপনি শর্ত ভঙ্গ করলেন তাতে করলে পরের বছর বাংলাদেশী কেউ আনার ব্যাপারে উৎসাহ দেখবেন কিংবা ব্লাকলিস্টেড করে রেখে দিবে .
বর্তমান সময়ে যে জিনিষ গুলো হচ্ছে জব ভিসা মাল্টায় পোল্যান্ড আসলেন পরের সপ্তাহে পর্তুগাল চলে যায়. যে যাচ্ছেন অনি নিজেও জানেন পরে যারা আসবে তাদের পথটা উনি ওনার কাজের কারণে বন্ধ করতে যাচ্ছেন . একটা কোম্পানি কাউকে হায়ার করে কেন ? কারণ তার লোক লাগবে , অরিজিনাল তার লোকের দরকার কিন্তু ভিসা তা যখন হাতে পেয়ে ওই দেশে এসেই পরের সপ্তাহে কাজে জয়েন না করে মালিকের সাথে দেখা না করে আপনি ফ্রান্স বা পর্তুগাল পালিয়ে গেলেন তাদের ওই মালিক বা কোম্পানি ধারণা কি হবে আপনার বেপারে ? অব্যশই পজেটিভ কিছু হবে . সে কোম্পানি ২য় দফায় কোনো বাংলাদেশী তার কোম্পানিতে আর বেপারে ইন্টারেস্ট দেখবেন সিউর . যেখানে থাইল্যান্ড নেপালি, ভিয়েতনামের মানুষ যে দেশে ভিসা ইয়ে যায় সে দেশের ৯০% আইন কানুন মেনে চলে সেখানে বাংলাদেশের মানুষ ৯০% আইন কানুন ভেঙে কোলে ইউরোপে . সো তারা কি আমাদের দেশ থেকে জব ভিসায় লোক আনবে না ওইসব দেশ থেকে লোক আনবেন ?
ছাত্র হিসাবে আসা ছাত্রদের কথা নাই বলি তাদের অবস্থা আরো ভয়াবহ। তাদের অনেকে আরো বড় আকারে জালিয়াতি করেছেন . একটা উদাহন দেয় . এক ছাত্র সুইডেনের স্টুডেন্টস ভিসা করে ইউরোপে প্রবেশের পর উনিভার্সিটি যায় নি . সে সরাসরি পর্তুগাল চলে গেছে এবং সেখানে যেয়ে উনিভার্সিটি কে মেইল করে বললো ক্লাস এই সেমিস্টারে তার পক্ষে জয়েন করা পসিবল না তার ফি যেন তাকে ফেরিত দেয়া হয় . বিদেশিরা এত মারপ্যাঁচ নি বুঝে বাঙালিরর .. সে পর্তুগালে বসে টিউশন ফি দেশে ফেরত নিয়ে নিয়েছে .
বাট বাঙালি যে বাঙালির দুশমন সেটা সেও জানত না . তার সাথে ভিসা পাওয়া আরেকজন ওই উনিভার্সিটিতে ই আছে সে কথায় কথায় এডমিশন অফিসে একদিন বলে ফেলছে সে তার বন্ধুকে পর্তুগাল দেখেছে , এডমিশন অফিসার টাস্কি খেয়ে বললো তাই নাকি কিন্তু সে তো বাংলাদেশে বললো আমরা ফি দেশে পাঠিয়েছি .. এর পর বাংলাদেশীদের এডমিশন দিতে ওই উনিভার্সিটি একটু চিন্তা করে , আর বললে অনেক কথা ভাই বলা যাবে কিন্তু কেউ কানে নিবে জানি তবুও একটু বললাম . কারণ আপনি পর হয়ে গেলেন আর বাকি সব গুলায় যাক এমন মানসিকতা আমাদের জন্য বিশাল প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিতে। সো আমাদের কে একটু চিন্তাশীল হতে হবে . আপনার দ্বারা অন্যের ক্ষতি হোক সেটা চাওয়া কাম্য না . প্লিজ যেখানেই আসেন সুযোগ নিজে তৈরি করেন অন্য এসে আপনার কাঁদে কাঁধ মেলানোর সুযোগ দিন .
আর জব ভিসার ক্ষেত্রে বাঙালিদের যে সমস্যা হয় সেটা হলো –
ওয়ার্ক পারমিট টা দুই নাম্বারি করে বের করে দেয়া বা অরিজিনাল ওয়ার্ড পার্মিটকে এডিট/কাটছাট করে হাজারটা মানুষের কাছে বিক্রি করা . বিশের করে চেক রিপাবলিকের পারমিট, রোমানিয়ার পারমিট, পর্তুগালের পারমিট গুলো দুই নাম্বারি বেশি হচ্ছে . এতগুলো মাথায় রাখতে হবে ভুয়া জিনিস সাধারণ মানুষ না ধরতে পারলেও এম্বাসি
সেটা দেখেই বলে দিতে পারে, এখন আপনি ভুয়া বা এডিট করা পারমিট গুলো চিনবেন কিভাবে সেটা হল আসল কথা. জাল ডকুমেন্টস/ভিসা সেনার অনেক কৌশল আছে. এই নিয়ে বিস্তারিত আলাপ করবো আরেক দিন . তবে যারা এই কাজ গুলো করে তাদের আইনের আওতায় আনা উচিত। একজনের জাল/ এডিট করা ডকুমেন্ট/ ওয়ার্ক পারমিটের কারণে একটা মানুষ যেমন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তেমনি হয় মানসিকভাবে।
তাছাড়া দূতাবাসে একবার ডকুমেন্টস জমা দেয়া হয়ে গেলে আপনাকে ৫/১০ বছরের এন্ট্রি ব্যান করার ক্ষমতা রাখে দূতাবাস কেননা আপনি জাল ডকুমেন্টস সরবরাহ করেছেন।