ইউরোপের ৯২,২১২ বর্গকিলোমিটারের দেশটি দক্ষিণ-পশ্চিম ইউরোপের একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। ইউরোপের সবেচেয়ে অভিবাসন বান্ধব দেশ হিসাবে পরিচিত এই পর্তুগাল নানা কারণে অভিবাসীদের কাছে জনপ্রিয়। আজকে এমন ই একটি বিষয় নিয়ে আলাপ করবো .
আমাদের কাছে অনেকের জিঅজ্ঞাসাঃ থাকে পর্তুগালে বৈধতা পাওয়া নিয়ে কিভাবে পর্তুগাল অল্প সময়ে বৈধতা পাওয়া যায় ? সচরাচর মানুষের মুখে এক ধরে গল্প বলা চলে পর্তুগালের বৈধ হওয়া নিয়ে। কেউ সরাসরি পর্তুগালে জব ভিসায় এসে, কেউ পড়াশুনা করতে এসে, কেউ ফ্যামিলি রি ইউনিয়ন করে, কেউ আবার দক্ষন শ্রমিক হিসাবে পর্তুগাল; এসে সেটেল হয়েছেন। অবৈধ থেকে কিংবা অন্য দেশের ভিসা দিয়ে পর্তুগাল সেটেলমেন্ট এর একটা সুযোগ আছে সেটা ২০১৩ সাল পর্যন্ত অনেকের কাছে অজানা ছিল. তথ্য প্রযুক্তির যুগে, মানুষের লেখালিখির মাদ্ধমে সেই খবর ছড়িয়ে গেছে অনেকের কাছে, যার ফলে ৬-৭ বছর আগের তুলনায় পর্তুগাল এখন অনেকের কাছে জনপ্রিয় গন্তব্য বলা চলে স্থায়ী হবার জন্য। বৈধতা নেয়ার সহজ একটা উপায় নিয়ে আজকে আলোচনা করবো। আশাকরি অনেকের কাজে আসবে। কিভাবে অন্য দেশের ভিসা দিয়ে পর্তুগাল বৈধ হবেন ?
অন্য দেশের বৈধ ভিসায় পর্তুগাল বৈধতা নিতে করণীয় কি কি ?
প্রথম: আপনি যদি সেঁজেনভুক্ত কোন দেশের ট্যুরিস্ট ভিসা, স্টুডেন্টস ভিসায় ইউরোপে প্রবেশ করে থাকেন এবং ভিসার/রেসিডেন্স পারমিটের মেয়াদ থেকে থাকে তাহলে আপনি সুযোগ নিতে পারেন পর্তুগালে বৈধ হবার . প্রক্রিয়াটি নরমাল আর্টিকেল ৮৮, ৮৯ থেকে কম সময় লাগবে, এবং খরচের পরিমান অনেক কম . তাহলে উপায়টা কি ?
আপনি পর্তুগালে ভিসার মেয়াদ থাকা অবস্থায় প্রবেশ করবেন। এবং পর্তুগাল প্রবেশের ৭২ ঘন্টার মধ্যে লিগ্যাল এন্ট্রি ডিক্লারেশন দিবেন, সেটা যেকোনো হোষ্টেল, হোটেল থেকে আপনি নিতে পারবেন যদি ১ দিইনের জন্যও হোটেল বুক করে নেন, আর আরো সহজ করে বললে বাংলাদেশী যেকোনো হোটেল থেকে সেটা টাকার বিনিময়ে না থেকেও নেয়া যায় লিসবনের মধ্যে। লিগ্যাল এন্ট্রির কাজ শেষে আপনাকে ২য় ধাপে কাজ শুরু করতে হবে.
২য়ত: আপনাকে যত দ্রত সম্ভব পর্তুগালের ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার ( Numero de identificacion fiscal) বের করতে হবে পর্তুগালের ট্যাক্স ডিপার্টমেন্ট থেকে। এটার জন্য একজন পর্তুগালের নাগরিক বা যার পার্মানেন্ট রেসিডেন্স আছে তার সাহায্য নিতে হবে অর্থাৎ একজন পাসপোর্ট হোল্ডার যিনি আপনার রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসাবে আপনাকে ট্যাক্স আইডি বের করতে সাহায্য করবে।
৩য়ত: আপনাকে পর্তুগালের একটা ঠিকানা লাগবে আপনার নামে জা পর্তুগালে জুনতা নামে পরিচিত। যে এরিয়ায় আপনি থাকবেন সেখানে জুনতা অফিস থেকে আপনি বাসার মালিকের সাহায্যে এটা সংগ্রহ করবেন।
২০-৩০ ইউরো খরচ পরবে এটার জন্য।
৪র্থত: পর্তুগালের যেকোনো ব্যাংকে একটা একাউন্ট খোলা। আপনি পর্তুগালের যেকোনো ব্যাংকে একাউন্ট করতে পারবেন আপনার পাসপোর্ট, ট্যাক্স আইডি, প্রফ অফ এড্ড্রেস দিয়ে। এটা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস।
৫ম: যেহেতু আপনি অন্য দেশের ট্যুরিস্ট ভিসায় বা স্টুডেন্টস ভিসায় পর্তুগাল বৈধতা নিতে যাচ্ছেন তাহলে আপনার জন্য সবচেয়ে দরকারী ডকুমেন্টস হচ্ছে একটা ইউনিভার্সিটির অফার লেটার। আপনি অন্য দেশের ভিসায়ও পর্তুগাল এডমিশন নিতে পারবেন, পরাসগুনা কন্টিনিউ করতে পারবেন। আর একবার এডমিশন হয়ে গেলে কোনো ইউনিভার্সিটিতে আপনার বৈধতা পাওয়ার বিষয়টা খুব সহজ হয়ে যাবে। যেখানে আর্টিকেল ৮৮-২, ৮৯-২ বর্তমানে অনেক লম্বা সময় নিচ্ছে ইমিগ্রেশনের সাক্ষাৎকার, এপয়েন্টমেন্ট পেতে (প্রায় ১৮-২৪ মাস বর্তমান প্রেক্ষাপটে) সেখানে আপনি স্টুডেন্টস ভিসায় (আর্টিকেল -৯১ ) খুব সহজে এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে ইমিগ্রেশনে ফাইল সাবমিট করে ১/২ মাসে রেসিডেন্স পারমিট পেতে পারেন। একটা কথা বলে রাখি যারা স্টুডেন্ট হিসাবে একবার রেসিডেন্স পারমিট পাবেন তাদের জন্যও যে সময় থেকে আপনি বৈধ হবেন সেটা থেকে নাগরিকত্ব আবেদন পর্যন্ত সময় গুলো গণনা করা হবে, জা অন্য দেশ গুলোতে করা হয় না. অর্থাৎ কাজ করে আর পড়াশুনা করে রেসিডেন্স পারমিট পাবার দিন থেকে ৫ বছর পর আপনি নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন। পার্ট টাইম কাজের সুযোগ পাবেন কিন্তু আক্ষরিক অর্থে আপনি পর্তুগালে ফুল টাইম জব করতে পারবেন স্টাডি ঠিক রেখেও।
৬ষ্ঠ: আপনি যদি কাজ করতে কেন সে ক্ষেত্রে ইউনিভার্সিটি থেকে একটা ডিক্লারেশন নিয়ে সোশ্যাল অফিসে সোশ্যাল নাম্বারের জন্য এপ্লাই করে দেয়া। ১ মাসের মধ্যে সেটা কোলে আসবে, আর যদি কোন কারণে আপনি আর্টিকেল পরিবর্তন করে ফুল টাইম কাজের ক্যাটাগরিতে যেতে কেন তাহলে আপনাকে একটা জব মেনেজ করতে হবে ফুল টাইম এবং ৩/৬ ট্যাক্স ( ফুল ট্যাক্স ) দিয়ে আপনি আর্টিকেল ৮৮ এ ডেট নিয়ে কার্ড চেন্জ করে নিতে পারবেন। সেটার জন্য ফুলটাইম জব কন্ট্রাক্ট, সেলারি স্লিপ, কোম্পানির ফুলটাইম কাজের ডিক্লারেশন, সোশ্যাল ডিক্লারেশন লাগবে।
সারমর্ম: আপনি যেই দেশের ভিসায় ই ইউরোপে প্রবেশ করেন না কেন, ভিসার মেয়াদ থাকা অবস্থায় পর্তুগাল প্রবেশ করতে হবে, উপরের সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে, যদি সম্ভব হয় আগে থেকে প্লান করে পর্তুগালের কোনো ইউনিভার্সিটি থেকে এডমিশন লেটার নিয়ে রাখতে হবে. না পারলে যে সেমিস্টারের সময় পাবেন সেটাতে ১ সেমিস্টারের ফিস দিয়ে এডমিশন নিয়ে ডিক্লারেশন নিয়ে নিবেন। এবং ব্যাংকে ৪/৬ হাজার ইউরো দেখিয়ে স্টেটমেন্ট নিয়ে নিবেন। যখন আপনি আর্টিকেল-৯১ এর অধীনে এপয়েন্টমেন্ট নিবেন উপরের সমস্যা ডকুমেন্টস একসাথে নিয়ে ( লয়ারের সাহায্য নিতে পারেন ২০০-৩০০ ইউরো নিবে ) ডেট অনুযায়ী কোলে যাবেন ইমিগ্রেশন অফিসে। সব ঠিক থাকলে ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়ে স্লিপ দিয়ে দিবে। ১৫-২০ দিনের মধ্যে কার্ড বাসায় কোলে আসবে।
এটা হচ্ছে সবচেয়ে সহজ এবং কম খরচে লিগ্যাল হবার নিনজা টেকনিক এই মুহূর্তে। অন্যথায় পর্তুগালে নরমাল প্রসিডিউর অনুসরণ করলে আপাতত ১৫-২২ মাস অপেক্ষা করে ফাষ্ট রেসিডেন্স পারমিট হাতে নিতে হবে/পারবেন প্লাস সেটার পিছনে ৪/৬ লাখ মিনিমাম খরচ যাবে।
আমার ব্লগের অন্যান্য পোষ্ট পড়ুন:
- অবৈধ হলেও স্পেনে বৈধতা পাবেন যেভাবে ! How to Get Residence Permit in Spain ?
- ব্রিটেনে উচ্চশিক্ষার আবেদনের প্রক্রিয়া ! যে ধাপ গুলো অনুসরণ করবেন ইউকেতে পড়তে চাইলে !
- গত এক বছরে ইউরোপে বাংলাদেশী ৮০৫৫ নাগরিকত্ব পেয়েছেন ।
তাছাড়া আমার ব্লগের ফেইসবুক পেইজে যুক্ত হতে পারেন এই লিংকে: LIFES IN EUROPE