গত ৫ ই অক্টোবর ২০২০ সাল থেকে স্টুডেন্ট ভিসার জন্য নতুন নিয়ম কার্যকর হয়েছে ব্রিটেনে । ১লা জানুয়ারি ২০২১ থেকে ব্রিটেনের ওয়ার্ক পারমিট ভিসার ক্ষেত্রেও শর্ত শিথিল করার ঘোষণা দিয়েছে ব্রিটিশ সরকার। এর ফলে বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ও কাজের জন্য আসতে আগ্রহীদের যুক্তরাজ্যে পড়াশোনা ও কাজের সুযোগ পুনরায় উন্মুক্ত হওয়ার পথে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন এই ব্যবস্থা চালু হলে অনেক বাংলাদেশী যুক্তরাজ্যে আসার জন্য আবেদন করবেন। আজকে মূলত ব্রিটেনে পড়াশুনার জন্য আসতে চাইলে কিভাবে স্টেপ বাই স্টেপ আগাবেন সেই বিষয়ে লিখবঃ চলুন তাহলে দেখি আবেদনের ধাপ গুলো কি কি ?
আমি প্রক্রিয়াটা কে চার ধাপে ভাগ করতে চাই।
১. ইউনিভার্সিটি তে আবেদন
২. ভিসার জন্য আবেদন
৩. ফ্লাই করার পূর্ব প্রস্তুতি
৪. ইউকে তে পৌঁছানোর পর
আসুন এই চার ধাপে আমাদের কি কি করা প্রয়োজন এবং কি কি আমাদের মাথায় রাখতে হবে। ব্রিটেনে পড়াশুনার উদ্দেশ্য থাকলে আপনাকে অবশ্যই কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মাথাই রাখতে হবে।
১. ইউনিভার্সিটি তে আবেদন
*সবার প্রথমে কোন বিষয়ে করতে চান সেই বিষয়টা নির্ধারণ করুন। এই ক্ষেত্রে মাথায় রাখবেন আপনি কোন বিষয়টা বোঝেন, আপনার ইন্টারেস্ট রয়েছে এবং ইউকে তে সেটেল হওয়ার ক্ষেত্রে আপনার জন্য ভালো হবে, এই বিষয়ে ইনফর্মেশন গুগোল করলে পেয়ে যাবেন অথবা ইউকে তে অবস্থানরত সিনিয়র কারো সাথে আলোচনা করুন।
* দ্বিতীয় ধাপে আপনি পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি তালিকা তৈরি করুন। তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে টিউশন ফি, কোর্স ডিউরেশন, ইউনিভার্সিটি কোন শহরে অবস্থিত, ওই শহরে পার্ট টাইম জব অ্যাভেলেবল কিনা, পার্ট টাইম জব থাকল কিন্তু বাসা ভাড়া বেশি কিনা এবং মোস্ট ইম্পরট্যান্টলি ইউনিভার্সিটি রেংকিং কে প্রাধান্য দিন। এইসব তেমন কোনো কঠিন কাজ নয়, আপনাকে ইন্টারনেটে গুগোল করে সময় দিতে হবে, নিজের অবস্থানের ওপর এ সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অনেকে ভাল রেংকিং প্রাধান্য দেয়, অনেকে কম টিউশন ফি প্রাধান্য দেয়, অনেকে কোথায় বাসা ভাড়া কম সেখানে সেটা প্রাধান্য দেয়। নিজে প্রাথমিক ধারণা অর্জন করুন তারপর অন্য কারো সাজেশন নিন।
*এই ধাপে এসে আপনার একাডেমিক কাগজপত্র উঠানো আছে কিনা চেক করুন. যদি আপনি অনার্সে আসছেন তবে এসএসসি, এইচএসসি এর সার্টিফিকেট এবং মার্কশিট রেডি রাখুন। যদি আপনি মাস্টার্সে আসছেন তবে অনার্সের সার্টিফিকেট এবং ট্রান্সক্রিপ্ট রেডি রাখুন। মাস্টার্সে আসলে এসএসসি এবং এইচএসসি ডকুমেন্টস অপশনাল।
*আপনি যে ইউনিভার্সিটিতেই এপ্লাই করতে যান না কেন, প্রথমেই কন্ডিশনাল অফার দিবে। যার একটা কন্ডিশন হবে ইংলিশ প্রফিশিয়েন্সি প্রমাণ করা। তাই আগে থেকে আইইএলটিএসের প্রস্তুতি নিন। প্রয়োজনে 2 মাস প্রস্তুতি নিন। আপনার আইইএলটিএস-এর স্কোরের উপর নির্ভর করবে আপনি ইউনিভার্সিটিতে অ্যাপ্লাই করতে পারবেন এবং পার্শিয়াল কোনো টিউশন ফি থেকে ওয়েবার পাবেন কিনা। অনেকেই প্রশ্ন করেন আইএলটিএস ছাড়া হবে কিনা। হয়তো কিছু ইউনিভার্সিটি অল্টারনেটিভ গ্রহণ করে। তবে আইইএলটিএস সবসময়ই সেইফ অপশন।
*এখন আপনি পছন্দের ইউনিভার্সিটিগুলোতে এপ্লাই করেন। অনেক ভার্সিটি তে এপ্লাই করার সময় পার্সোনাল স্টেটমেন্ট দিতে হয়। এটা নিয়ে নার্ভাস হওয়ার কিছু নাই। 2 ঘন্টা গুগোল করেন জেনে যাবেন। তারপরও যদি কনফিডেন্সের অভাব থাকে এই গ্রুপের সিনিয়র যারা আছে তাদের কাছ থেকে স্যাম্পল কালেক্ট করেন। নিজে করার চেষ্টা করেন। তাহলে ক্যাশ লেটার ইন্টারভিউ বলেন আর ভিসা ইন্তেরভিউ বলেন, কোথাও আটকাবেন না। যখন অন্য কারো কাছ থেকে রেডিমেট সবকিছু পেয়ে যাবেন তখন কিন্তু আপনার একটু ভিন্ন প্রশ্ন করলে আটকানো সম্ভাবনা থাকে। তারপরও কনফিডেন্স যদি না আসে অন্য কারো হেল্প নিন, কিন্তু নিজে জিনিস গুলো জেনে রাখুন।
*এই পর্যায়ে এসে হয়তো আপনি একটি অথবা একাধিক ইউনিভার্সিটি থেকে কন্ডিশনাল অফার পাবেন। কন্ডিশনাল অফার পাওয়া ইউনিভার্সিটিগুলো থেকে কোনটা পছন্দ করবেন? আর প্রথম ধাপে এবং দ্বিতীয় ধাপে ফিরে যান, অর্থাৎ আপনি যে সাবজেক্টে পড়তে যাচ্ছেন সেই সাবজেক্ট, ইউনিভার্সিটি রেংকিং, টিউশন ফি, লিভিং কস্ট, আদার ফেসিলিতিজ ইত্যাদি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিন আপনি কোন ইউনিভার্সিটি পছন্দ করবেন।
আপনার ইউনিভার্সিটি রেংকিং কি, আপনার সাবজেক্ট কয়টি স্তরে বিভক্ত, কয়টা মডিউল আছে, ওই শহরের পয়েন্ট অফ ইন্টারেস্ট কি ইত্যাদি সবকিছু কিন্তু আপনার জানা হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া আর কি কি প্রশ্ন হতে পারে তার জন্য সিনিয়র কারো সাথে কথা বলতে পারেন।
কন্ডিশনাল অপারেটর এর কন্ডিশন গুলো হতে পারে কিছু টাকা ডিপোজিট করা, pre Cas ইন্টারভিউতে উত্তীর্ণ হওয়া ইত্যাদি।
মোট টিউশন ফি থেকে সাধারণত ইউনিভার্সিটি গুলো ২০০০-৪০০০ পাউন্ড ইনিশিয়াল ডিপোজিট করতে বলে।
যাইহোক ধরে নিলাম আপনি pre-cas ইন্টারভিউতে উত্তীর্ণ হয়েছেন এবং CAS letter / offer letter পেয়েছেন
২.ভিসার জন্য আবেদন
*সবার প্রথমে ব্যাংকে টাকা জমা রাখেন। কত রাখবেন? আপনার টিউশন ফি এর বাকি টাকা + প্রথম বছরের লিভিং কস্ট (12006)
উদাহরণ ঃ
ধরুন আপনার মোট টিউশন ফি 12 হাজার পাউন্ড।
আপনি ইনিশিয়াল ডিপোজিট করেছিলেন তিন হাজার পাউন্ড।
তাহলে ব্যাংকে রাখতে হবে ৯০০০+১২০০৬ পাউন্ড। অবশ্যই মনে রাখবেন, লন্ডনের ভিতরে এবং লন্ডনের বাহিরে লিভিং কস্ট ভিন্ন। জমা করার আগে চেক করে নিবেন।
আমি সাজেস্ট করব ১-১.৫ লক্ষ টাকা বেশি রাখতে। কারেন্সি এক্সচেঞ্জ রেট ফ্লাকচুয়েশন এর কারণে টাকা যেন কমতি না পরে।
* ভিসার কন্ডিশন অনুসারে মেডিকেল টেস্ট বা টিবি টেস্ট করুন। প্রথম ধাপে কন্ডিশনাল অফার পাওয়ার পরেই আপনি এটা করতে পারবেন। আপনি একটা ইউনিভার্সিটির কন্ডিশনাল অফার দিয়ে মেডিকেল টেস্ট করে পরে যদি অন্য কোন ইউনিভার্সিটি পছন্দ করেন সেটাও করতে পারবেন। এর জন্য আগে থেকে অ্যাপোয়েন্টমেন্ট নিন। গুগোল করলে ফোন নাম্বার ঠিকানা সহ ডিটেলস পেয়ে যাবেন।
* ব্যাংকে স্টুডেন্ট ফাইল খুলেন। আপনি চাইলে এই একাউন্টে টাকা দেখাতে পারেন। ভিন্ন হলেও সমস্যা নাই।
* Cas letter পাওয়ার পর vfs বা ভিসা এপ্লিকেশন সেন্টার এ অ্যাপোয়েন্টমেন্ট এর জন্য আবেদন করুন। মনে রাখবেন, অ্যাপোয়েন্টমেন্ট এর তারিখ এমনভাবে নির্ধারণ করবেন যেন আপনার ব্যাংকে রাখা টাকা মিনিমাম 28 দিন হয়। শেফ থাকার জন্য কয়েকদিন বাড়িয়ে অ্যাপোয়েন্টমেন্ট ডেট নিন। কারণ অনেক সময় ব্যাংক স্টেটমেন্ট এবং সলভেন্সি সার্টিফিকেট উঠানোর জন্য সময় লাগতে পারে। যাদের কয়েক মাস আগে থেকেই টাকা রাখা ছিল তারা CAS লেটার পাওয়ার পর অ্যাপোয়েন্টমেন্ট তাড়াতাড়ি নিলেও সমস্যা নাই।
* অ্যাপোয়েন্টমেন্ট নেয়ার পাশাপাশি IHS (international health surcharge) fee দিতে হবে. একেকজনের ক্ষেত্রে এই এমাউন্ট একেক রকম হতে পারে।
* অ্যাপোয়েন্টমেন্ট এর দিন সম্ভাব্য কি কি প্রশ্ন হতে পারে, সম্ভাব্য উত্তর কি কি হতে পারে প্রস্তুতি নিন। সিনিয়রদের সাজেশন নিন। সম্ভাব্য প্রশ্ন কি হতে পারে এ নিয়ে গুগোল করুন। সবকিছু নিয়ে পরিষ্কার ধারণা রাখুন। অন্য কারো দেওয়া মুখস্থ উত্তর নিয়ে গেলে প্যাচ খাওয়াবেন।
* প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে নির্ধারিত দিনে ভিসা অফিসে চলেন। দেখি সব আছে কিনা চলেন। এসএসসি, এইচএসসি বা অনার্সের কাগজপত্র আছে? আইএলটিএস আছে? অফার লেটার বা কেস লেটার আছে? মেডিকেল রিপোর্ট আছে? ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেট এবং ব্যাংক স্টেটমেন্ট আছে? ভিসা অ্যাপ্লিকেশন ফর্ম যেটা অ্যাপোয়েন্টমেন্ট নেওয়ার সময় পূরণ করেছি এবং চেকলিস্ট প্রিন্ট করেছি? অ্যাপোয়েন্টমেন্ট কনফার্মেশন প্রিন্ট করেছি? এগুলো নিয়ে নেই। সাথে ভিসা অ্যাপ্লিকেশন ফি নিয়ে নেই। পাসপোর্ট ও সাথে নিয়ে নেই। পাসপোর্ট এর প্রথম পৃষ্ঠার একটা কপি ও নিব। সাথে কিছু ভাংতি টাকা রাখবো। মোবাইল ফোনটা ভিতরে বন্ধ রাখবো।
IHS fee এর ডকুমেন্টস নিলাম না। এটা ছাড়া অ্যাপোয়েন্টমেন্ট নেয়া যায় না অনলাইন এ। এটা পে করলেই হয়। তাই এটা লাগবে না।
অতিরিক্ত ঃ
যেহেতু টাকা আপনার একাউন্টে দেখিয়েছেন, একটা লেটার দিতে পারেন আপনার পড়াশোনার উদ্দেশ্যে আপনার বাবা আপনাকে এই টাকা দিয়েছে। আপনি যদি টাকা আপনার বাবা মায়ের একাউন্টে দেখান তবে আপনাকে ইনকাম সোর্স দেখাতে হবে।
আপনার ইন্টারভিউ ভালো হয়েছে, ভিসা পেয়েছেন।
৩.ফ্লাই করার পূর্ব প্রস্তুতি
*বিমানের টিকেট বুক দেন, রুম বুক দেন। কিছু শীতের কেনাকাটা করেন। ভালো করে মায়ের হাতের খাবার খান। খুব বেশি কেনাকাটা করার দরকার নাই। একই দামে এখানে সব পাবেন। স্টুডেন্ট ফাইল বা হুন্ডি দিয়ে টাকা পডর আনায় নিতে পারবেন। কিছু কেশ নিয়ে ফ্লাই করবেন। যদি করোনাকালীন অাসেন তবে কেশ বেশী অানবেন।
৪.ইউকে তে পৌঁছানোর পর
*এয়ারপোর্টে ওয়াইফাই কানেক্টেড করে পরিবারকে জানিয়ে দিন যে পৌঁছে গেছেন। না হয় স্টোরি আপলোড দিন। সবাই বুঝে যাবে।
* মোবাইল সিমকার্ড কেনা (airpor / grocery / online)
* প্রয়োজনীয় কেনাকাটা। (grocery / online)
* স্টুডেন্ট আইডি কার্ড উঠানো (University)
* বিআরপি উঠানো (University / post office)
* ইউকে ব্যাংক একাউন্ট খোলা (you can apply online even before you fly, save time)
* ট্রাভেল কার্ড কিনে রাখা ( or buy online pass, cheaper, show your phone to driver)
* ডাক্তার বা জিপির কাছে রেজিষ্ট্রেশন করা ( suggested by University)
* ন্যাশনাল ইন্সুরেন্স নাম্বার এর জন্য এপ্লাই করা ( online)
পুরো আর্টিকেলটি সোশ্যাল মিডিয়া থেকে সংগৃহীত। অরিজিনাল লেখক এর নাম জানা নেই। কেউ দাবি করলে তার ক্রেডিট এবং নাম দেয়া হবে। ধন্যবাদ।
যুবরাজের ব্লগের অন্যান্য লিখা পড়তে পারেনঃ