যুক্তরাজ্য বা ইউকে সম্পর্কে জানে না এমন মানুষ দুনিয়ায় কম ই খুঁজে পাওয়া যাবে। ভ্রমণ, ব্যাবসা- বাণিজ্য সেটেমলমেন্ট কিংবা পড়াশুনার জন্য বিশ্ব বিখ্যাত বা সুনাম রয়েছে যুক্তরাজ্য বা ইউকের .
ইউরোপে ভিসা ও ভ্রমণ বিষয়ক ব্লগের ধারাবাহিক পর্বে আজকে আলোচনা করবো ইউকে বা যুক্তরাজ্যের ভ্রমণ ভিসা সংক্রান্ত বিষয়ে। কিভাবে আপনি যুক্তরাজ্যের ভ্রমণ ভিসা নিবেন ? কোথায় আবেদন করবে ? কত টাকা ফি প্রদান করতে হবে ? ইত্যাদি বিষয়ে। আসুন তাহলে মূল পর্ব শুরু করি . যেহেতু আমি ইউরোপে আছি আমি ইউরোপ থেকে কিভাবে ইউকের ট্যুরিস্ট ভিসার আবেদন করবে সেই প্রসিডিউর আপনাকে আজ বলবো।জাবা বাংলাদেশ থেকে আবেদন করতে চান তাদের আবেদনের ডকুমেন্টস সব একই জাস্ট জমাদানের পদ্ধতি একটু ভিন্ন। সেটা নিয়ে আরেকদিন সংক্ষেপে আলাপ করবো।
আজকে যে বিষয় নিয়ে আলোচনা করব সেটা হল ইউরোপে যারা স্টুডেন্টস/বিজনেসম্যান/ জব ভিসায়/ স্কিল্ড ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে আছেন তারা কিভাবে ইউকের ভ্রমন/ট্যুরিস্ট ভিসা আবেদন করবেন ? আমরা জানি ইউকে/আয়ারল্যান্ড ইউরোপিইয়ন ইউনিয়ন ভুক্ত দেশ হাওয়া সত্তেও থার্ড কান্ট্রির নাগরিকদের জন্য ফ্রি মুভমেন্টের চুক্তির আওতার বাহিরে রাখা হয়েছে অর্থাৎ যারা ইউরোপের পাসপোর্ট পান নাই তারা ভিসা নিয়ে প্রবেশ করতে হবে । আসুন সংক্ষেপে আলোচনা করি কিভাবে ইউকের ভ্রমন ভিসা পেতে পারি । ধাপে ধাপে জিনিসগুলো ব্যাখ্যা করছি /
প্রথমত :
আপনাকে অনলাইনে ইউকের আবেদন ফর্ম পুরন করতে হবে আবেদন ফর্ম পুরন করবেন এইখানে গিয়ে ইউজার অ্যাকাউন্ট ওপেন করতে হবে। ইউজার ওপেন করে শুরু করবেন ফর্ম পুরনের কাজ ।- https://www.visa4uk.fco.gov.uk/account
২য়ত :
ফর্ম পুরনের শেষের দিকে আপনাকে ভিসা অ্যাপলিকেশন ফি পেমেন্ট কনফার্ম করতে হবে । সেটার করতে আপনাকে পেপাল/ভিসা/মাস্টার কার্ড /ক্রল/ওয়েব মানি যেকোনো পেমেন্ট সিস্টেমে পে করতে পারবেন । ইউকের ভিসা অ্যাপলিকেশন ফি ১৯৩ ইউরো সার্ভিস চার্জ সহ ।
৩য়ত :
পেমেন্টের কাজ শেষ হলে আপনাকে ভিসা অ্যাপলিকেশন সেন্টার বা এমব্যাসির কন্সুলার সেকশানে অ্যাপলিকেশন জমা দেয়ার দিনক্ষন/ ডেট/অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে । অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেয়ার কাজ শেষ হলে পুরো অ্যাপলিকেশন ফর্ম + ভিসা অ্যাপলিকেশন ফি কনফার্মেশন প্রিন্টআউট করতে হবে । আপনি চাইলে যেকোনো সময় অনলাইন থেকে অ্যাপলিকেশন + পেমেন্টের কপি ডাউনলোড করতে পারবেন । অ্যাপলিকেশন ফর্ম ফিলাপের পর নিছের স্ট্যাটাস শো করবে আপনার ফাইলে ।
৪র্থ :
উপরের কাজ গুলো শেষ করে আপনাকে এখন ফিনালি কি কি ডকুমেন্টস সাথে জমা দিতে হবে তার লিস্ট তৈরি করতে হবে । সাথে কি কি ডকুমেন্টস লাগবে তার তালিকা পাবেন এই যায়গায় থেকে http://bit.ly/1V02vvN .
আমি স্টুডেন্টস/ জব / বিজনেসম্যান হিসাবে যারা আছেন তাদের গুলো বিস্তারিত আলাপ করব এই পর্বে ।
কি কি ডকুমেন্টস জমা দিবেন ভিসা আপ্পলিকেশনের সাথে ?
# ফিলাপ কৃত আবেদন ফর্ম (ইউথ ফটো এন্ড ডোন্ট ফরগেট টু সাইন)
# পেমেন্ট কনফার্মেশন লেটার (প্রিন্ট ফর্ম ইমেইল)
# অ্যাঁপয়েন্টমেন্ট কনফার্মেশন প্রিন্ট আউট
# পাসপোর্ট মিনিমাম ১ বছরের ভ্যালিড ।
#পাসপোর্ট সাইজ ফটো ৩৫*৪৫
# ব্যাংক স্টেটমেন্ট / সাফিসিয়েন্ট ফান্ড ( ব্যাংক স্টেটমেন্ট হলে মিনিমান ৬ মাসের স্টেটমেন্ট/ ট্রানজেকশান জমা দিতে হবে । ব্যাংক স্টেটমেন্টে অবশ্যই ব্যাংক কর্তৃ পক্ষের দ্বারা সিল মোহর/ তারিখ এবং তাদের সাক্ষর থাকতে হবে। ব্যাংক একাউন্ট এর তথ্যের ইন্টারনেট প্রিন্ট আউট গ্রহন যোগ্য হবে না মনে রাখবেন ।
# ইউকে থেকে কেউ ইনভাইটেশন পাঠালে ব্যাংক স্টেটমেন্টের দরকার পরবে না । সেই ক্ষেত্রে যে ইনভাইট করবে তার ব্যাংক স্টেটমেন্টের কপি + ঐ লোকের/ পাসপোর্ট এর ডাটা পেজের কপি লাগবে । ইনভাইটেশন কোন কোম্পানি/ অরগানাইজেশনের হলে তাদের হেডেড পেপারে ইনভাইটেশন হতে হবে ।
# বর্তমান যে দেশে আছেন অই দেশের লিগাল স্ট্যাটাস এর কপি ( ভ্যালিড ভিসা/ রেসিডেন্সের ফটোকপি )
# স্টুডেন্টস হলে ইউনিভার্সিটি থেকে হলি ডে লেটার বা কারেন্ট স্টুডেন্টস তার কনফারমেনশন লেটার । হলি ডে লেটার তার সেমিস্টার সম্পর্কে এবং কত দিন ছুটি সেটা উল্লেখ থাকতে হবে ।
# জব করলে কোম্পানির হেডেড পেপারে করনফারমেশন লেটার ( জব সম্পর্কে বিস্তারিত যেমন সেলারি, আপনার জব পজিশন, কত দিন যাবত জব করতেছেন ইত্যাদি লিখা থাকতে হবে )
# জব করলে লাস্ট ৩ মাসের সেলারি স্লিপ ।
# কেউ নিজে বিজনেস করলে বিজনেস রেজিট্রেশন পেপারস (ট্যাক্স অফিস থেকে) জমা করতে হবে । বিজনেস রেজিট্রেশন পেপারে অবশ্যই নাম, কি টাইপের বিজনেস, কবে শুরু করছেন ইত্যাদি মেনশন থাকতে হবে ।
# বিজনেসের ক্ষেত্রে লাস্ট ৩ মাসের ব্যাল্যান্স শিট ( অর্থাৎ আপনার আয় বায় কত তার একটা নমুনা ছক)
উপরোক্ত ডকুমেন্টস সহ হাজির হয়ে যাবেন ইউকের ভিসা অ্যাপলিকেশন সেন্টারে । অ্যাঁপয়েন্টমেন্ট কনফার্মেশন লেটার এ স্থান ও তারিখ লিখা থাকবে । মিনিমাম ১৫ মিনিট আগে ইন্টারভিউ এবং বায়োমেট্রিক এর জন্য হাজির হবে । ভিসা অ্যাপলিকেশন সেন্টারে আবেদন জমা দেয়ার পর আপনাকে ফরমাল কিছু প্রশ্ন করা হবে । এবং বায়োমেট্রিক (ডিজিটাল ফেসিয়াল ইমেজ + ফিঙ্গার প্রিন্ট ) নেয়া হবে । আপনি চাইলে সকল প্রকার ডকুমেন্টস অরিজিনল জমা দিতে পারেন । তারা আপনাকে ভিসা অ্যাপলিকেশন ফর্ম আর আপমার রেসিডেন্সের কপি বাদে সকল প্রকার ডকুমেন্টস ফেরত দিবে বাই পোষ্টে ।
# ভিসা আবেদনের দিন থেকে ১৫ কর্ম দিবস সময় নিবে নরমালি ভিসার ডিসিশান পেতে । ভিসা পেলে/রিজেক্ট হলে পোষ্টের মাধ্যমে আপনার পাসপোর্ট বাসার ঠিকানায় পাঠিয়ে দেয়া হবে ।
তবে বর্তমানে ইউকের ভিসার ক্ষেত্রে দুইভাবে ই আবেদনের সুযোগ আছে, ভিসা আবেদন কেন্দ্রে সরাসরি যেয়ে ডকুমেন্টস সাবমিট করে, আরেকটা হলো অনলাইনে ই আবেদন সংক্রান্ত সকল প্রকার ডকুমেন্ট আপলোড করে জমা করা. আপনি যেটা পছন্দ করে সেটা ই করতে পারবেন। বর্তমানে ভিসার সিদ্ধান্ত জানাতে নরমাল চেয়ে একটু সময় নিচ্ছে। আশা করি পূর্বের ন্যায় ১৫ কর্ম দিবসেই ভিসার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানাবে।